নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: দেশের চার জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে পৃথক ঘটনায় তিন ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে দুইজন, কুড়িগ্রামের উলিপুরে ও শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে একজন করে মারা গেছেন।
মোহনগঞ্জের পানুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া (৩৮) শনিবার অটো চার্জ দিতে গিয়ে মারা যান। শুকনা জায়গা না থাকায় জানাজা পড়ার স্থান নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, মোহনগঞ্জ সমাজ রাস্তায় জানাজা পড়া হবে।
লাশ কিভাবে বহন করা হবে? অবশেষে গ্রামবাসী কলাগাছের ভেলা তৈরি করে। রোববার ভেলায় করে মানিকের লাশ পানুর গ্রামের সামনে সমাজ রাস্তায় নিয়ে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। এর আগে শনিবার চার জেলায় ছয়জন প্রাণ হারান। এ নিয়ে দুদিনে ১৩ জনের মৃত্যু হলো। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ছাতক (সুনামগঞ্জ) : গত শনিবার বিকালে ছাতক থেকে গোবিন্দগঞ্জ আসার পথে মাধবপুরে বানের পানির প্রবল স্রোতে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়।
তিন যাত্রীকে শনিবার রাতে জীবিত উদ্ধার করে এলাকাবাসী ও বাকি দুজন নিখোঁজ ছিলেন। রোববার খালেদ আহমদ (২৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ উপজেলার কালারুকা ইউপির খারগাও মাদ্রাসার সামনে থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত খালেদ ছৈলাআফজলাবাদ ইউপির রাধানগর গ্রামের হাজি আহমদ আলীর ছেলে। আরও এক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে রোববার সকালে সুরমা নদীতে ডুবে তমাল আহমদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার কালারুকা ইউপির মুক্তিগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউপির দীঘলী গ্রামে অজিত দাস নামে এক ব্যক্তি ঘরের ভেতরে পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের উলিপুরের দুর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবে এক কিশোরী মারা গেছে। নিহত মাকসুদা জান্নাত (১১) যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের মেয়ে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে রামজীবনপুর গ্রামে রোববার সকালে বানের পানিতে ডুবে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে পানিতে পড়ে যান তিনি। নিহত আমিনুল ইসলাম মুন্সি (৫১) সমাজ সহিলদেও ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের হাজি কালাচান মিয়ার ছেলে।
শেরপুর : জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের খইলকুড়া গ্রামে এক কিশোর ঢলের পানিতে গোসল করতে নেমে ভেসে যায়।
মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : মোহনগঞ্জে চারদিকে শুধুই বন্যার পানি। বাড়ির আঙ্গিনা, ফসলের মাঠ, কবরস্থানসহ চারদিক অথৈ পানিতে ভরপুর। কোথাও শুকনো জায়গা নেই। মানুষ মারা গেলেও কাঁধে ‘খাটিয়া’ বহনের সুযোগ নেই।
তাই ভরসা এখন কলাগাছের ভেলা। মোহনগঞ্জের পানুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া (৩৮) শনিবার অটো চার্জ দিতে গিয়ে মারা যান।
শুকনা জায়গা না থাকায় জানাজা পড়ার স্থান নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, মোহনগঞ্জ সমাজ রাস্তায় জানাজা পড়া হবে। লাশ কিভাবে বহন করা হবে? অবশেষে গ্রামবাসী কলাগাছের ভেলা তৈরি করে।
রোববার ভেলায় করে মানিকের লাশ পানুর গ্রামের সামনে সমাজ রাস্তায় নিয়ে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র লতিফুর রহমান রতন জানান, বন্যার পানিতে পানুর গ্রাম ডুবে যাওয়ায় মানিক মিয়ার জানাজা পড়তে সমস্যা হয়। খবর পেয়ে তিনি সেখানে ছুটে যান এবং মানিকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বিমান বাংলাদেশ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান আওয়ামী লীগ কর্মী মানিকের অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করে তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।