নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: কুড়িয়ে আনা শাকপাতা বরিশালের চৌমাথা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালানো হাসিনা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার হাসিনা বেগমের বসবাসের স্থানে যান এবং তাঁর স্বামীর চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকার অনুদানের চেক তুলে দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগমের মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে দুই শতাংশ জমিসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে হাসিনা বেগমের আশ্রিত বাড়িতে যান, তাঁদের খোঁজখবর নেন।
তিনি হাসিনার পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আল মামুন মামুন তালুদার, প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।
সাজ্জাদ পারভেজ জানান, হাসিনা বেগমের দুর্দশার খবর প্রকাশের পরপরই জেলা প্রশাসন জসীম উদ্দীন হায়দার ব্যক্তিগতভাবে পরিবারটির খোঁজ নেন। এরপর হাসিনা বেগমের স্বামীর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তার জন্য ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক।
এই দম্পতিকে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর দেওয়া হবে।জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে আপ্লুত হন মোতালেব-হাসিনা দম্পতি। উচ্ছ্বসিত হাসিনা বেগম বলেন, ‘মোগো আর দুঃখ নাই। এত দিন মনে হরতাম দুন্নইতে মোগো কেউ নাই, জীবনডাই মিছা। এহন বুঝি মোরা এলহা না।
ডিসি স্যার, মোর খেগো খোঁজ নেছে, টাকা দেছে, মাথা গোঁজনের জন্য ঘরও দেবেন। এহন স্বামীর আর মোর একটা কিনার অইছে।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, সমাজে এ রকম অনেক অসহায় মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার সুযোগ পান না।
ফলে মানবেতর জীবন কাটান। চোখ-কান খোলা রাখলে এমন মানুষের দুর্দশা লাঘবে উদ্যোগ নিতে পারেন। তাঁরা যাতে মাথা গুঁজতে পারেন সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বাড়ি ও দুই শতাংশ জমির ব্যবস্থা করা হবে।
হাসিনা বেগম বরিশাল নগরের রাত্রিকালীন বাজার চৌমাথায় শাক পাতা বিক্রি করে সংসার চালান। ৪০ বছর আগে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ডেবরা গ্রামে তাঁদের ছোট বসতি ছিল। সেই বসতি সুগন্ধা নদীতে বিলীন হয়। এরপর থেকে তাঁরা বরিশালে থাকেন।
স্বামী মোতালেব হাওলাদার রিকশা মেরামতের কাজ করতেন। ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন। বছর সাতেক আগে স্বামী মোতালেবের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।একমাত্র ছেলে বিয়ে করে থাকেন ঝালকাঠিতে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। প্রতিদিন সকালে পান্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়েন প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে। দুপুরে কোনো কোনো দিন বানরুটি খান। দিনভর শাকপাতা সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ফেরেন। এরপর সেগুলো নিয়ে যান চৌমাথা বাজারে।
শাকপাতা বেচে দিনে তাঁর ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হাসিনা বেগম থাকেন সিঅ্যান্ডবি রোডের চৌমাথা পুলের দক্ষিণপারের একটা বাড়িতে। স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁদের বিনা ভাড়ায় থাকতে দিয়েছেন। বাড়িটা দেখাশোনা করেন তাঁরাই, যা আয় হয় তার অর্ধেকটা চলে যায় দুজনের ওষুধ খরচে। বাকিটা দিয়ে কোনোরকমে চলে তাঁদের দুজনের সংসার।
হাসিনা বেগমের এই দুর্বিষহ জীবনসংগ্রাম নিয়ে ‘মোগো দুজনরে একলগে নিও, নাইলে দ্যাহনের কেউ থাকপে না’ শিরোনামে ২৪ মে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর তিনি এই আর্থিক সহায়তা পেলেন।